প্রধানমন্ত্রীর নতুন প্রকল্প : ই–শ্রম কার্ডে ৩০০০ টাকা সুবিধা
ভারতের অসংগঠিত খাতে কর্মরত শ্রমিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্র সরকার এনেছে ই–শ্রম কার্ড প্রকল্প। দেশের কোটি কোটি শ্রমিক ইতিমধ্যেই এই কার্ডের আওতায় এসেছেন। এবার সরকারের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, যোগ্য শ্রমিকরা ই–শ্রম কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা পাবেন।
এই ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে জানব – ই–শ্রম কার্ড কি, কারা এই সুবিধা পাবেন, আবেদন প্রক্রিয়া কেমন, এবং এর সুবিধাগুলো।
---
ই–শ্রম কার্ড কি?
ই–শ্রম কার্ড হলো কেন্দ্র সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের একটি বিশেষ উদ্যোগ। এর মাধ্যমে অসংগঠিত খাতের শ্রমিকদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে একটি জাতীয় ডাটাবেস।
👉 সহজ ভাষায় বললে, এটি একটি ১২ ডিজিটের UAN (Universal Account Number) সহ পরিচয়পত্র, যা শ্রমিককে বিভিন্ন সরকারি স্কিম ও সামাজিক নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করবে।
---
নতুন সুবিধা: মাসে ৩,০০০ টাকা
ই–শ্রম কার্ড প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শ্রম যোগী মানধন যোজনা। এর আওতায়—
৬০ বছর বয়সে পৌঁছালে শ্রমিকরা প্রতি মাসে ৩,০০০ টাকা পেনশন পাবেন।
নিবন্ধনের সময় শ্রমিককে বয়স অনুযায়ী সামান্য মাসিক কন্ট্রিবিউশন (৫০–২০০ টাকা) দিতে হবে।
সরকারও সমপরিমাণ অর্থ অবদান রাখবে।
অর্থাৎ, অবসর–পরবর্তী জীবনে নিশ্চিত আর্থিক সুরক্ষা থাকবে।
---
কারা সুবিধা পাবেন?
সবাই এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন না। কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে:
বয়স সীমা: ১৮–৪০ বছরের মধ্যে।
পেশা: অসংগঠিত খাতের শ্রমিক (দিনমজুর, কৃষিশ্রমিক, রিকশা চালক, গৃহকর্মী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইত্যাদি)।
আয় সীমা: মাসিক আয় ১৫,০০০ টাকার কম।
সরকারি চাকরিজীবী বা আয়করদাতা নন।
অবশ্যই ই–শ্রম কার্ডধারী হতে হবে।
---
আবেদন করার প্রক্রিয়া
ই–শ্রম কার্ড তৈরি এবং এই প্রকল্পে নিবন্ধন করার ধাপগুলো খুবই সহজ।
যা যা লাগবে
আধার কার্ড
মোবাইল নম্বর (আধারের সঙ্গে লিঙ্ক থাকা আবশ্যক)
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ডিটেলস
পাসপোর্ট সাইজ ছবি
কোথায় আবেদন করবেন?
1. অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে eshram.gov.in গিয়ে অনলাইনে আবেদন করা যাবে।
2. অথবা নিকটবর্তী CSC (Common Service Centre) থেকেও ফ্রি রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব।
মাসিক কন্ট্রিবিউশন (বয়স অনুযায়ী)
আবেদন করার সময় আপনার বয়স যত হবে, তার ওপর নির্ভর করে আপনাকে প্রতি মাসে কত টাকা জমা দিতে হবে।
বয়স শ্রমিককে প্রতি মাসে জমা দিতে হবে সরকারও সমান টাকা দেবে মোট জমা হবে
২০ বছর ₹৭৫ ₹৭৫ ₹১৫০
২৫ বছর ₹১০০ ₹১০০ ₹২০০
৩০ বছর ₹১৫০ ₹১৫০ ₹৩০০
৩৫ বছর ₹২০০ ₹২০০ ₹৪০০
৪০ বছর ₹২০০ ₹২০০ ₹৪০০
---
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ন্যূনতম মাসিক কন্ট্রিবিউশন ₹৫৫ (১৮ বছর বয়সে যোগ দিলে)।
সর্বাধিক মাসিক কন্ট্রিবিউশন ₹২০০ (৩০–৪০ বছর বয়সে যোগ দিলে)।
শ্রমিক যা টাকা দেবেন, সরকারও সমপরিমাণ টাকা দেবে।
৬০ বছর বয়সের পর মাসে ₹৩,০০০ টাকা পেনশন নিশ্চিত।
---
👉 তাই যত তাড়াতাড়ি আবেদন করবেন, মাসিক কন্ট্রিবিউশন তত কম হবে।
১৮ বছর বয়সে যোগ দিলে মাত্র ₹৫৫ মাসে জমা দিলেই হবে, আর ৪০ বছর বয়সে যোগ দিলে মাসে ₹২০০ দিতে হবে।
---
ই–শ্রম কার্ডের সুবিধা
ই–শ্রম কার্ড কেবল পেনশন নয়, আরও অনেক সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
মাসিক পেনশন – অবসরের পর ৩,০০০ টাকা মাসিক সুবিধা।
দুর্ঘটনা বীমা – ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বীমা সুবিধা।
ভবিষ্যৎ সঞ্চয় – মাসিক কন্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে নিরাপদ সঞ্চয়।
সরকারি স্কিমে প্রবেশাধিকার – বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার সুযোগ।
সহজ রেজিস্ট্রেশন – কেবল আধার ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকলেই যথেষ্ট।
---
সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
Q1. আমি কি এখনই ৩,০০০ টাকা পাব?
👉 না। এটি একটি পেনশন প্রকল্প। ৬০ বছর পূর্ণ হলে এই টাকা দেওয়া হবে।
Q2. আমি ৪৫ বছর বয়সে আবেদন করতে পারি?
👉 না। শুধুমাত্র ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে আবেদন করা যাবে।
Q3. CSC সেন্টারে আবেদন করলে কি টাকা লাগবে?
👉 না, সম্পূর্ণ ফ্রি।
Q4. ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছাড়া আবেদন করা যাবে?
👉 না, সক্রিয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আবশ্যক।
---
উপসংহার
প্রধানমন্ত্রীর ই–শ্রম কার্ড প্রকল্পে ৩,০০০ টাকা সুবিধা হলো অসংগঠিত খাতের শ্রমিকদের জন্য এক বিশাল আশীর্বাদ। যারা সারা জীবন কঠোর পরিশ্রম করে বেঁচে থাকেন কিন্তু অবসর জীবনে আর্থিক নিরাপত্তাহীনতার ভয় পান, তাঁদের জন্য এই প্রকল্প আশার আলো নিয়ে এসেছে।
👉 যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ এই শ্রেণির শ্রমিক হন, তবে দেরি না করে আজই ই–শ্রম কার্ড তৈরি করুন এবং ভবিষ্যতের জন্য ৩,০০০ টাকার নিশ্চয়তা সুরক্ষিত করুন।
---